বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : পেকুয়া উপজেলার মগনামায় জয়নাল আবেদীন নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের একটি চক্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের আসামী করে এলাকা ছাড়া ও সহায় সম্পদ লুটপাটে নেমেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজার শহরে লালদীঘির পাড়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ করেন।
এতে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রকাশ্যে একজন যুবককে গুলি করে হত্যার ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয়। তারাও এ ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন।
কিন্তু এ হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আপ্যায়ন সম্পাদক ও যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর সাবেক দেহরক্ষী স্থানীয় মগনামার ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াতের একটি চক্র মগনামাকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব শূণ্য করার মিশনে নেমেছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নিরীহ ও নিরপরাধ নেতাকর্মিকে মামলা আসামী করা হয়েছে। আসামী হওয়া এসব নেতাকর্মিদের বাড়ী ঘরে অগ্নিসংযোগ ও সহায় সম্পদ লুটপাট চালানো হচ্ছে।
ন্যাক্কারজনক এ হত্যার ঘটনাকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াত চক্রের ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা খুবই দু:খজনক এবং নিন্দনীয় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ষড়যন্ত্রকারিদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন।
গত ৩ মে রাত ৮ টার দিকে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ফুলতলা স্টেশনে দুইটি অটোরিক্সা যোগে এসে বোরকা পরিহিত ৭/৮ জন দূর্বৃত্ত স্থানীয় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীনসহ তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ী গুলিবর্ষণ করে। এসময় সেখান ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও গুলিবিদ্ধ জয়নালকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন ওইদিন রাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় পরদিন ( ৪ মে ) নিহত জয়নালের ভাই মো. আমিরুজ্জামান বাদী হয়ে ৩২ জনকে আসামী করে পেকুয়া থানায় মামলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, দূর্বৃত্ত কর্তৃক স্থানীয় যুবক জয়নাল আবেদীন হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রকৃত দোষীদের তদন্তপূর্বক পুলিশকে চিহ্নিত করতে হবে। এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ঘটনাকে পুঁজি করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত চক্র মগনামাকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব শূণ্য করার মিশন শুরু করা হয়েছে।
মূলত: মগনামায় আগামী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কোন প্রার্থী যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেই মিশনের অংশ হিসেবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াসিমের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত চক্র এ ধরণের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন জেলা আওয়ামী লীগের এ নেতা।
মুজিবুর বলেন, “ জয়নাল হত্যা মামলায় মগনামার নিরীহ ও নিরপরাধ স্থানীয় অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিকে আসামী করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের বাড়ী ঘরে অগ্নিসংযোগ, মৎস্যঘের দখল, গরু-ছাগলসহ সহায়-সম্পদ লুটপাট এবং পরিবারের লোকজনকে হুমকীদান করা অব্যাহত রয়েছে। যা মহান মুক্তিযুদ্ধে একাত্তরের ঘটনাকেও হার মানিয়েছে। ”
“ ঘটনার সময় এলাকায় ছিলেন না, চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং হত্যার ঘটনায় জড়িতদের সঙ্গে কোন ধরণের জীবনেও সম্পর্ক নেই এমন আওয়ামী লীগের নিরীহ নেতাকর্মিকে মামলায় আসামী করা হয়েছে। ”
ঘটনার তদন্ত পূর্বক প্রকৃত দোষীদের মামলায় আসামী এবং নিরীহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিদের আসামী থেকে প্রত্যাহার করার জন্য প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের আহবান জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ দলগতভাবে কোন ধরণের হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসী তৎপরতাকে প্রশ্রয় দেয় না। মগনামায় জয়নাল হত্যাকারিদেরও আওয়ামী লীগ কোনভাবে সহ্য করবে না। কিন্তু এ হত্যার ঘটনাকে পুঁজি করে স্থানীয় একটি দুষ্ট চক্রের অপতৎপরতা ভিন্নভাবে প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
“ আমরা ঘটনার বিশ্লেষন ও খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি, এ হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের অনেক নিরীহ নেতাকর্মিকে আসামী করা হয়েছে। যারা কোনভাবেই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। এতে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। ”
পুলিশের প্রতি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষীদের আসামী করে নিরীহ ব্যক্তিদের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, জয়নাল হত্যার ঘটনার পর থেকে দুষ্ট চক্রের যেসব লোকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের বাড়ী-ঘরে অগ্নিসংযোগ, সহায়-সম্পদ লুটপাট ও দখলের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় ষড়যন্ত্রকারিদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খালেদ মিথুন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক এডভোকেট তাপস রক্ষিত, উপ-প্রচার সম্পাদক এম এ মঞ্জুর, সদস্য এ টি এম জিয়াউদ্দিন জিয়া, জিএম আবুল কাশেম ও মিজানুর রহমান প্রমুখ।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply